শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১১ জানুয়ারি ২০২৩

মসজিদে যাওয়ার সময় যেসব আমল করবেন

মসজিদে যাওয়ার সময় যেসব আমল করবেন

মসজিদ আল্লাহর ঘর। পৃথিবীতে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্থান। জামাতবদ্ধ হয়ে মহান আল্লাহর দাসত্বের চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেওয়া হয় মসজিদে। তাই মসজিদের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর আত্মার সম্পর্ক। মিনার থেকে আজানের সুর ভেসে এলেই মুমিন বান্দা ছুটে যান মসজিদের দিকে। সাহাবাগণ আজান শুনলে কাজ অসমাপ্ত রেখেই মসজিদের পথে পা বাড়াতেন। মসজিদে যাওয়ার সময়কার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এখানে তুলে ধরা হলো। যা পালন করলে অসীম সওয়াব ও ফজিলত লাভ করা যায়।

আজানের জবাব ও দরুদ পাঠ
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে শুনবে, তখন সে যেরূপ বলে, তদ্রূপ বলবে। এরপর আমার ওপর সালাত পাঠ করবে; করণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার সালাত পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ১০ বার সালাত (রহমত) প্রদান করবেন। এরপর আমার জন্য অসিলা চাইবে, কারণ ওসিলা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান। আল্লাহর একজন মাত্র বান্দাই এই মর্যাদা লাভ করবেন এবং আমি আশা করি আমিই হব সেই বান্দা। যে ব্যক্তি আমার জন্য অসিলা প্রার্থনা করবে, তাঁর জন্য শাফায়াত পাওনা হয়ে যাবে।’ (সহিহ মুসলিম: ১/২৮৮, হাদিস নং: ৩৮৪)

পরিপূর্ণ অজু করা ও দোয়া পড়া
হজরত ওমর (র.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে অজু করে, অতঃপর বলে—‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’ তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সে প্রবেশ করতে পারবে।’ (মুসলিম: ১৭/২২৪, মেশকাত, পৃ-৩৯)

আগে আগে মসজিদে যাওয়া
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘আজান ও প্রথম কাতারে কী পরিমাণ সওয়াব ও পুণ্য রয়েছে তা যদি লোকেরা জানত, আর লটারি করা ছাড়া এই দুই স্থান না পেত, তবে তারা লটারি করে হলেও প্রথম কাতার দখল করত। অনুরূপভাবে যদি তারা আগে আগে মসজিদে আসার সওয়াব ও পুণ্য সম্পর্কে অবগতি লাভ করত, তবে অতি দ্রুতগতিতে তারা সেদিকে অগ্রসর হতো। ঠিক তেমনিভাবে তারা যদি অন্ধকারের ফজরের নামাজে কত পরিমাণ সওয়াব ও পুণ্য তা উপলব্ধি করতে পারত, তবে হাতে-পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা তাতে হাজির হতো।’ (বুখারি: ৬১৫) সুতরাং আমরা আগেভাগে মসজিদের দিকে রওনা শুরু করব ইনশাআল্লাহ।

পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া
মসজিদের দিকে কদম ফেলা আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। বান্দা এর মাধ্যমে অনেক উঁচু মর্যাদা অর্জন করেন। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের দিক নির্দেশনা দেব না যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা পাপরাশি ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা উঁচু করেন? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, জি আল্লাহর রাসুল! তখন মহানবী (স.) বললেন, কষ্টের সময় ভালোভাবে অজু করা এবং অধিক পরিমাণে মসজিদ অভিমুখে পা ফেলা।’ (মুসলিম: ২৫১)

মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়া
মসজিদে প্রবেশের সময় আল্লাহর কাছে রহমতের দোয়া করা। হজরত আবু উসাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন যেন সে বলে ‘আল্লাহুম্মাফতাহ লি আবওয়াবা রাহমাতিকা’ অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন’; আর যখন বের হবে তখন যেন বলে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।’ (নাসায়ি: ৭২৯)

ডান পা আগে প্রবেশ করানো
মসজিদে প্রবেশের সময় আদবের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা। পবিত্র যে কাজ ডান দিক দিয়ে করা নবীজীর শিক্ষা। মসজিদে প্রবেশের সময়ও ডান পা আগে প্রবেশ করানো। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন ‘এটাও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত যে, তুমি ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবে এবং বাম পা দিয়ে তা হতে বের হবে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম: ৭৯১)

প্রবেশের পর দুই রাকাত নামাজ পড়া
এই সুন্নতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর ঘরে প্রবেশ করে প্রথম কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। এই নামাজকে তাহিয়াতুল মাসজিদ বলে। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তারপর বসে।’ (বুখারি: ১১৭২)

বিনয় ও ধীরস্থিরভাবে রাস্তা অতিক্রম ও জামাতে শরিক হওয়া
ধীরস্থিরভাবে রাস্তা অতিক্রম করা ও জামাতে শরিক হওয়া সুন্নত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন তোমরা ইকামত শুনবে তখন নামাজ আদায়ের জন্য চলে যাবে। তোমরা পথ চলার ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করবে। তাড়াহুড়া করবে না। এরপর মসজিদে যে কয় রাকাত পাবে তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যাবে তা পূর্ণ করবে।’ (বুখারি: ৬৩৬)

নামাজির সামনে দিয়ে না হাঁটা
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যদি মুসল্লির সম্মুখ দিয়ে গমনকারী ব্যক্তির জানা থাকত যে, তার ওপর কি পাপের বোঝা চেপেছে, তবে চল্লিশ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকাকেও সে প্রাধান্য দিত। বর্ণনাকারী আবু নাছর বলেন, আমি জানি না তিনি চল্লিশ দিন, মাস নাকি বছর বলেছেন’। (বুখারি: ৫১০; মুসলিম: ৫০৭)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মসজিদে যাওয়া-আসা ও জামাতে নামাজ আদায়ের সকল আদব ও সুন্নত যথাযথ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়