শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১২ জানুয়ারি ২০২৩

বিয়ের পর নারীরা কি বাবার বাড়িতে মুসাফির?

বিয়ের পর নারীরা কি বাবার বাড়িতে মুসাফির?

বিয়ের পর সাধারণত স্বামীর বাসস্থানই নারীদের স্থায়ী নিবাস। নারী স্বামীর বাড়িতে স্থায়ীভাবে অবস্থান ও সংসার শুরু করলে স্বামীর ঘর তার প্রকৃত বাড়ি হিসেবে গণ্য হবে। এ অবস্থায় বাবার বাড়ি ৪৮ মাইল দূরত্বে হলে এবং মেয়ে বাবার বাড়িতে এসে ১৫ দিন অবস্থান করার নিয়ত না করলে সে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে। (এমদাদুল ফতোয়া: ১/৫৭৯, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৪/৩২৬)

মুসাফিরের নামাজের বিধান
সফরকারীকে শরিয়তের বিধি-বিধানে কিছু শিথিলতা দিয়েছে ইসলাম। যেমন চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো দুই রাকাত আদায় করবে। সফর অবস্থায় কেউ ইচ্ছাকৃত চার রাকাত নামাজ পূর্ণ করলে তার গুনাহ হবে। এক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি ভুলক্রমে চার রাকাত পড়া শুরু করে এবং যদি সে প্রথম বৈঠক করে থাকে, তাহলে সাহু-সেজদা করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে, আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে ফরজ আদায় হবে না, পুনরায় পড়তে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/৯১)

মেয়েদের সফরের বিধান
মহিলারা বিয়ের আগ পর্যন্ত বাবার বাড়িতে মুকিম থাকবে। তবে বিয়ের পর যদি স্বামীর বাড়িতে মৌলিকভাবে থাকে এবং বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে, তাহলে বাবার বাড়িতে মুসাফির থাকবে, আর যদি বাবার বাড়িতে মৌলিকভাবে থাকে, তাহলে তা তার মূল অবস্থানস্থল হিসেবেই ধর্তব্য হবে। এর অর্থ হলো—মুকিম কিংবা মুসাফিরের বিধান মৌলিক বাসস্থানের ওপর নির্ভর করছে। ধরেন, কোনো মহিলা যদি বিয়ের পর বাবার বাড়িতেই স্থায়ীভাবে থাকে, তখন ৪৮ মাইল দূরত্ব এবং ১৫ দিনের কম অবস্থানের ভিত্তিতে শ্বশুরবাড়িতেই সফরের বিধান কার্যকর হবে। (আল বাহরুর রায়েক: ২/১২৮, রদ্দুল মুখতার: ২/১৩১)

মুসাফিরের সুন্নত নামাজ পড়ার বিধান
মনে রাখতে হবে, কসর শুধু ফরজের ক্ষেত্রে। সুন্নত পড়লে পুরোটাই পড়বে। কেননা সুন্নত নামাজের কসর হয় না। মুসাফির ব্যক্তির জন্য চলন্ত অবস্থায় বা তাড়াহুড়ো থাকলে ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্যান্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা না পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়তে হবে। (এলাউস সুনান: ৭/১৯১, রদ্দুল মুখতার: ১/৭৪২)

উল্লেখ্য, কোনো জায়গায় ১৫ দিন বা ততোধিক অবস্থানের নিয়ত করলে সে সেখানে মুকিম হয়ে যাবে। সেখান থেকে সামানাসহ প্রস্থানের আগ পর্যন্ত সেখানে পূর্ণ নামাজ পড়বে এবং মুকিমের বিধান জারি থাকবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১০৪)

মুকিম কখন মুসাফির হয়
কোনো ব্যক্তি তার অবস্থানস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরে সফরের নিয়তে বের হয়ে তার এলাকা পেরুলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১/৪৩৬, আহসানুল ফতোয়া: ৪/১০৫)। আকাশ পথে সফরের ক্ষেত্রেও দূরত্বের হিসাব স্থলভাগের সমান, অর্থাৎ স্থলভাগের ৭৮ কিলোমিটার পরিমাণ দূরত্বের সফর হলে আকাশপথে মুসাফির হবে। (রদ্দুল মুখতার: ১/৭৩৫)

শহরের ক্ষেত্রে নিজ এলাকার সীমানা বলতে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত সীমানাকে বুঝাবে। সফর থেকে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও নিজ এলাকার সীমানায় প্রবেশের মাধ্যমেই তার সফরের বিধান শেষ হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুখতার: ২/১২৮)

পার্বত্য এলাকায় সফর সমতলে চলার হিসেবেই হবে, অর্থাৎ পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢালুসহ দূরত্বের হিসাব হবে।’ (ফাতহুল কাদির: ২/৩১, আল বাহরুর রায়েক: ২/২২৯) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল মুসাফিরকে ইসলামি বিধি-বিধান যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়