রোববার   ১৯ মে ২০২৪ || ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত: ১১:১০, ২২ এপ্রিল ২০২৪

জয়পুরহাটের কালাই

‘আমার সন্তানদের বিনামূল্যে পড়ান ফরিদ স্যার’

‘আমার সন্তানদের বিনামূল্যে পড়ান ফরিদ স্যার’
সংগৃহীত

‘আমার তিনটি সন্তান এই স্কুলে পড়ে। আমি একজন ভ্যানচালক, আমার সন্তানদের পড়াশোনা করাতে খুব কষ্ট হয়। আমার তিন সন্তানকে ফরিদ স্যার বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়ান এবং খোঁজখবর রাখেন। এতে আমি অনেক আনন্দিত’।

শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আক্তার সম্বন্ধে কথাগুলো বলছিলেন কালাই উপজেলার তেলিহার গ্রামের অভিভাবক ওয়াসিম হোসেন। শুধু তিনি নন, ওই এলাকার অনেক অভিভাবকের ভরসা শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আক্তার।

শিক্ষাই ধ্যান-জ্ঞান। দুই যুগ ধরে বিনাপারিশ্রমিকে শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর ইচ্ছায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদান কার্যক্রম ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণও কিনে দেন শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আক্তার। তিনি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার উদয়পুর তেলিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ওই গ্রামেই বসবাস করেন তিনি।

জানা গেছে, ফরিদ উদ্দিন আক্তার দুই যুগ আগে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন স্থানীয় একটি প্রাথমিকে। চাকরির শুরু থেকেই উপলব্ধি করেন শিক্ষার বিস্তার ঘটাবেন। স্কুলে অর্পিত দায়িত্ব পালন শেষে শুরু হয় নিজ স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদান কার্যক্রম। এখন পর্যন্ত লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠদান করিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খাতাণ্ডকলমসহ শিক্ষা উপকরণও কিনে দেন তিনি।

কালাই উপজেলার তেলিহার গ্রামের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম বলেন, ফরিদ স্যারের আচরণ খুব ভালো। তিনি যে স্কুলে পড়ান সেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়াও ভালো হচ্ছে। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাবা-মার কাছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খোঁজখবর নেন।

ওই গ্রামের কয়েকজন অভিভাবক বলেন, শিক্ষক ফরিদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক আবার কেউবা জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের উচ্চ পদে। তাই শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আক্তারের কাছে সন্তানদের প্রাইভেট বা টিউশনি করার সুযোগ পাওয়ায় অভিভাবকরা কৃতজ্ঞ।

প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন বলেন, একদিন তিনিও টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারেননি, লেখাপড়া করতে হয়েছে খুব কষ্টে। শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে। অবসরে যাওয়ার পর থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবেই শিশুদের বিনামূল্যে পাঠদান চালিয়ে যাবেন বলে আশা করেন তিনি।

কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী দাদা বলেন, ছাত্র জীবনে নিজ সহপাঠীদের ও এলাকার বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পড়িয়েছেন তিনি। কারো বই কেনা, পরীক্ষার ফরম ফিলআপ, স্কুল-কলেজের পোশাকের ব্যবস্থা ও গ্রামে ঘুরে ঘুরে ঝরে পড়া শিশুকে স্কুলমুখী করেছেন বলেও বেশ সুনাম রয়েছে শিক্ষক ফরিদের।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ